ভৈরব রেলওয়ে সেতু
ভৈরব রেলওয়ে সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৪°০২′৪২″ উত্তর ৯০°৫৯′৪১″ পূর্ব / ২৪.০৪৫° উত্তর ৯০.৯৯৪৭° পূর্ব |
বহন করে | ট্রেন |
অতিক্রম করে | মেঘনা নদী |
স্থান | কিশোরগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ |
যার নামে নামকরণ | ভৈরব উপজেলা |
মালিক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
রক্ষণাবেক্ষক | রেলপথ মন্ত্রণালয় |
বৈশিষ্ট্য | |
উপাদান | ইস্পাত |
মোট দৈর্ঘ্য | ১ম: ৯১৪[১] ২য়: ৯৮৪ মিটার |
প্রস্থ | ৭ মিটার |
দীর্ঘতম স্প্যান | ১০০ মিটার |
স্প্যানের সংখ্যা | ৯টি |
ইতিহাস | |
নির্মাণ শুরু | ১ম: ১৯৩৫ ২য়: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ |
নির্মাণ শেষ | ১ম: ১৯৩৭ ২য়: ২০১৭ |
নির্মাণ ব্যয় | ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ/৬২০ কোটি বাংলাদেশী টাকা |
উদ্বোধন হয় | ১ম: ১৯৩৭ ২য়: ৯ নভেম্বর ২০১৭ |
অবস্থান | |
ভৈরব রেলওয়ে সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার মাঝে মেঘনা নদীর উপর অবস্থিত একটি রেলওয়ে সেতু। একই স্থানে পাশাপাশি দুটি রেলওয়ে সেতু রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে “শহীদ হাবিলদার আব্দুল হালিম রেলওয়ে সেতু” বা “ভৈরব প্রথম রেলওয়ে সেতু” (পূর্বে “কিং জর্জ-ষষ্ঠ সেতুু” নামে পরিচিত ছিল[১]), এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে “রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলওয়ে সেতু” বা “ভৈরব দ্বিতীয় রেলওয়ে সেতু”। সেতু দুটির পাশেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু বা ভৈরব সড়ক সেতু অবস্থিত।
ভৈরব প্রথম রেল সেতু
[সম্পাদনা]১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে প্রথম সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৩৭ সালে শেষ হয়।[২][৩] সেতুটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক।[৩] তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের রাজা ষষ্ঠ জর্জের নামানুসারে এই সেতুর নাম 'কিং জর্জ ষষ্ঠ সেতুু' রাখা হয়।[৩] এই সেতু দিয়ে প্রথম মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১৯৩৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর।[৩] ১৯৩৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এর ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।[৩] ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় সেতুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেতুটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।[৩] পুনঃনির্মাণ শেষে ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সেতুটি উদ্বোধন করেন।[৩] তখন সেতুটি নাম তার নামেই করার কথা ছিলো, তবে তিনি সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন, এখানে যুদ্ধ চলাকালীন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন যার নাম হাবিলদার আবদুল হালিম।[৩] তিনি সাথে সাথে সিদ্ধান্ত পাল্টে সেতুটির নামকরণ করেন ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।[৩][৪] এ সেতুটি ৯১৪ মিটার দীর্ঘ।[১] এতে শুধুমাত্র মিটার-গেজ ট্র্যাক রয়েছে।[৫]
ভৈরব দ্বিতীয় রেল সেতু
[সম্পাদনা]২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইনের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতুর নির্মাণ শুরু হয়।[২][৬] ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ও এফকন্স যৌথভাবে বর্তমান ভৈরব প্রথম রেলওয়ে সেতুর ৪০ মিটার দক্ষিণ প্রান্তে আরও একটি রেল সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে।[৬] প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।[৬] কিন্তু গত ২০১৫ সালে ঘন ঘন হরতাল অবরোধের প্রভাব আর বর্ষা মৌসুমে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় সেতুটির নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।[৬] প্রথম ধাপে নির্মাণ কাজের সময়সীমা ৬ মাস বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্ধারণ করা হয়।[৬] কিন্তু ভারতের কলকাতা থেকে নৌপথে বাংলাদেশের ভৈরব সেতুর ‘স্প্যান’ আনার পথে নৌ-দুর্ঘটনার শিকার হয় একটি কার্গো।[৬] ফলে সেতুটির নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয় এবং পরে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় আরও ৬ মাস প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসে নির্ধারিত করা হয়।[৬] পরে ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।[২] ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ[৫]/৬২০ কোটি[৭] বাংলাদেশী টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত। অর্থের জোগান এসেছে ভারতীয় ঋণ সহায়তা (এলওসি ফান্ড) থেকে।[৫] এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও ভারতীয়। ইরকন-এফকনস জেভি নামে একটি কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করছে।[২] সেতুটি ইস্পাতের তৈরি।[৬] এতে মোট ১২টি পিলার ও ৯টি স্প্যান রয়েছে।[২][৬][৮] প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার, ভর ৮০০ টন।[৬] সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৮৪ মিটার[২]/১.০২ কিলোমিটার[৬] এবং প্রস্থ ৭ মিটার।[৬][৭] এতে মিটার-গেজ ও ইন্ডিয়ান-গেজ মিলে ডুয়েল-গেজ ট্র্যাক রয়েছে।[২] সেতুটি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে।[৯]
ঘটনা ও দুর্ঘটনা
[সম্পাদনা]- ১২/০২/১৯৫০: ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের জেরে এই দিন সেতুর ওপর বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতে পলায়নরত হিন্দুদের হত্যা করা হয়। আনসাররা সেতুর দুপ্রান্তে ভৈরব বাজার জংশন বা আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়তো। ট্রেন হাইজ্যাক করে ভেতর থেকে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতো। সম্পূর্ণভাবে সেতুর ওপর উঠে পড়লে চালক ট্রেন থামিয়ে দিতো। এরপর আনসাররা প্রত্যেক হিন্দুকে এক এক করে টেনে বের করে এনে তাদের হত্যা করে মৃতদেহটা সেতুর ওপর থেকে নদীর জলে ফেলে দিতো।[১০][১১] তথাগত রায়ের মতে, এই হত্যাকাণ্ডটা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করেই করা হয়েছিল। ট্রেনের চালক, পরিচালকসহ সমস্ত রেলকর্মীই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।[১২] মূল নিবন্ধ: অ্যান্ডারসন সেতুর হত্যাকাণ্ড
- ১৩/১২/১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই দিন দুপুর দেড়টা থেকে দুটোর দিকে ভৈরব রেল সেতুটি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এতে সেতুটির ভৈরব অংশের দুটি স্প্যান ও আশুগঞ্জ অংশের একটি স্প্যান ভেঙে পড়ে।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "ANALYSIS OF PROBLEMS" [সমস্যার বিশ্লেষণ] (পিডিএফ)। বাংলাদেশ রেলওয়ে (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "উদ্বোধনের অপেক্ষায়"। প্রথম আলো। ২০১৭-১০-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "বঙ্গবন্ধুর উদারতা ও শহীদ হাবিলদার আবদুল হালিম সেতু"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০২০-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ ক খ "ভৈরব রেল সেতু ধ্বংস করে পাকিস্তানি সেনারা"। এনটিভি। ২০১৫-১২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ ক খ গ "সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস রেল সেতুর উদ্বোধন"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৭-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ "মার্চে উন্মুক্ত হচ্ছে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু: রেলওয়ে মহাপরিচালক"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৬-১২-২৩। ২০১৯-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ ক খ "দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতুর উদ্বোধন আজ"। দৈনিক ভোরের কাগজ। ২০১৭-১১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ "সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে"। দৈনিক ইনকিলাব। ২০১৭-০১-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ "ভৈরব দ্বিতীয় সেতু প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নামে"। আরটিভি। ২০১৭-১১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- ↑ Roy, Tathagata (২০০২)। My People, Uprooted। Kolkata: Ratna Prakashan। পৃষ্ঠা 185। আইএসবিএন 81-85709-67-X।
- ↑ "thematic chronology of mass violence in pakistan, 1947-2007"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ Roy, Tathagata (২০০২)। My People, Uprooted। Kolkata: Ratna Prakashan। পৃষ্ঠা 186। আইএসবিএন 81-85709-67-X।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিমিডিয়া কমন্সে Category:Anderson Bridge, Bangladesh সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।