প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান
প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান বা ইংরেজি পরিভাষায় প্রোটিয়োমিক্স (Proteomics) হল কোনও জীবদেহের সমস্ত প্রোটিনের গঠন ও কাজ নিয়ে বৃহৎ মাত্রার গবেষণা। বিজ্ঞানের এই শাখার নামকরণ করা হয় বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান তথা জিনোমিক্স-এর (Genomics) সাথে মিল রেখে। যদিও প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞানকে বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানের পরবর্তী ধাপ হিসেবে গণ্য করা হয়, আদতে প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান অনেক বেশি জটিল। বংশাণুসমগ্র মোটামুটি ধ্রুব একটি সত্ত্বা (constant entity), কিন্তু প্রোটিনসমগ্র বা "প্রোটিয়োম" কোষভেদে ভিন্ন হয় এবং বংশাণুসমগ্র ও পরিবেশের সাথে প্রাণ-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটিনসমগ্রের প্রকৃতি নিয়তই পরিবর্তিত হয়। একই জীবদেহে অবস্থানভেদে, জীবনচক্রের পর্যায়ভেদে ও পরিবেশভেদে প্রোটিন অভিব্যক্তি (প্রোটিন এক্সপ্রেশন) একেবারেই ভিন্ন হতে পারে।
প্রোটিনসমগ্র (প্রোটিয়োম) বলতে কোন জীবদেহের সমস্ত জীবনচক্র জুড়ে বিদ্যমান সমস্ত রকমের প্রোটিনের সমষ্টিকে বোঝায়। যেহেতু প্রোটিনসমূহ একাটি জীবের জীবনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, জৈব শনাক্তকারকসমূহের (বায়োমার্কার; বিশেষ করে যেগুলি কোন নির্দিষ্ট রোগকে শনাক্ত করে) আবিষ্কারে প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান অসামান্য অবদান রাখতে পারে।
মানুষের বংশাণুসমগ্রের একটি মোটামুটি খসড়া বিজ্ঞানীরা পেয়ে গেছেন; এখন বহু গবেষক পরীক্ষা করছেন কী ভাবে বংশাণু ও প্রোটিন পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যান্য প্রোটিন গঠন করে। মানব বংশাণুসমগ্র প্রকল্পের গবেষণায় একটি চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে মানুষের বংশাণুসমগ্রে প্রোটিনকে সঙ্কেতায়িত করে এমন বংশাণুর সংখ্যা (~২২,০০০) মানবদেহের প্রোটিনসমগ্রের সমস্ত প্রোটিনের সংখ্যার (~৪০০,০০০) তুলনায় অনেক কম।
মানবদেহের সমস্ত প্রোটিনের তালিকা তৈরি করা ও এদের কার্যপ্রণালী নির্ণয় করা বিজ্ঞানীদের জন্য এক দুরূহ চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে "হিউম্যান প্রোটিয়োম অর্গানাইজেশন" বা "মানব প্রোটিনসমগ্র সংস্থা"।