জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী | |
---|---|
জন্ম | জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮ সাল দুর্গাপুর, ঝিনাইদহ |
মৃত্যু | ১২ নভেম্বর ২০১৪ | (বয়স ৮৬)
পেশা | অধ্যাপনা, গবেষণা ও শিক্ষাবিদ |
পরিচিতির কারণ | কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক |
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী (জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮ - ১১ নভেম্বর, ২০১৪[১]) প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন) জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তখন অবশ্য বৃহত্তর যশোর জেলায় ছিল এর অবস্থান। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী মায়ের প্রথম সন্তান না হলেও একদিক দিয়ে প্রথম, কারণ তারও আগে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তার মা। সে মেয়েটি আঁতুড়েই মারা যায়। প্রথম ও চতুর্থ অবস্থানে তারা দুই ভাই, বাকি ছয়জন বোন। তার বাবা ফজলুর রহমান সিদ্দিকী থাকতেন কলকাতার একটি ভাড়া বাসায়। তিনি কলকাতার নর্মাল স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি যে পাঠশালায় পড়াশুনা করেছেন সেটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তার দাদা। কলকাতার নর্মাল স্কুলে তার বাবা ১৫ বছর শিক্ষকতা করার পরে কলকাতার বাইরে পোষ্টিং শুরু হয়। ফলে গ্রামের পাঠশালার পাঠ শেষ করে জিল্লুর রহমান বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণী তিনি পড়েছেন বাঁকুড়া জিলা স্কুলে।
১৯৪০-৪১ সালে তার বাবা আবার বদলি হলেন জলপাইগুড়ি। ১৯৪১ সালে জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী । ৮ম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় স্টার মার্কসসহ ১ম বিভাগ পেয়ে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে, আইএ ক্লাসে। তখন তিনি থাকতেন বউবাজার মোড়ে অবস্থিত টেইলর হোস্টেলে। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা হলে হোস্টেল ছেড়ে কয়েক মাস নিরাশ্রয় জীবনযাপন শেষে মীর্জাপুর স্ট্রিটের মুসলমান ছাত্রদের কলেজ হোস্টেলে তিনি ৩ মাস থাকেন। ১৯৪৭ সালে আইএ পরীক্ষা দিয়ে ১ম বিভাগ লাভ করেন। দেশভাগের পর ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স ক্লাসে ভর্তি হন। তখন তিনি থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। ১৯৫০ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় জিল্লুর রহমান ইংরেজি সাহিত্যে ১ম শ্রেণী লাভ করেন। ১৯৫১ সালের এমএ পরীক্ষায়ও ১ম শ্রেণী অর্জন করেন। জিল্লুর রহমান ১৯৫২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ডে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।[২]
১৯৫১ সালেই বিয়ে করেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তার স্ত্রীর নাম কায়সার। তার স্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহ শহরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, প্রাক্তন এমএলএ আবদুল মজিদের কন্যা। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে।[৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কাজ করেন ৩-৪ মাস। অক্সফোর্ড থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকা কলেজে প্রফেসর পদে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইংরেজি বিভাগের রিডার ও বিভাগীয় প্রধান হন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক 'পূর্বমেঘ'। ১৯৬৭ সালে তিনি মিল্টনের বিখ্যাত গদ্যরচনা অ্যারিওপ্যাজিটিকার অনুবাদ করেন। ১৯৭৩ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে মিল্টনের মৃত্যুর ত্রি-শতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রিগায় গিয়েছিলেন লেখক/কবি সম্মেলনে অংশ নিতে। সে সময় মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তিবিলিসি, কিয়েভসহ অনেক শহরেই সফর করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে ৪ বছরের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেন। সেখানেই ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে পুণর্বার যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির সময়টা তিনি অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে। ২০০০ সালে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এবং ২০০৩ সালে সেখান থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন কর্মী।[২] এছাড়াও তিনি ১৯৯০-৯১ সনে দায়িত্ব পালন করেন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে।[১]
প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী দেশে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন৷ তিনি বাংলা একাডেমী, ঢাকার ফেলো; এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ-এর ফেলো; বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্য চক্রের সভাপতি ইত্যাদি বিভিন্ন সম্মানজনক দায়িত্ব পালন করেন৷[৪]
সন্মাননা
[সম্পাদনা]প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদান রাখার জন্য বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন, যেমন- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭); কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা ট্রাস্ট এওয়ার্ড (১৯৯০); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯); এম.এ. হক স্বর্ণ পদক (২০০৩) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০)।[৪]
প্রকাশিত গ্রন্থ
[সম্পাদনা]- অ্যারিওপ্যাজেটিকা: অনুবাদ, ভূমিকা, টিকা (১৯৭১ সাল)
- স্যামসন অ্যাগনিমটিজ মিল্টন: কাব্যানুবাদ (১৯৭৩ সাল)
- হৃদয়ে জনপদে: কবিতা (১৯৭৫ সাল)
- শব্দের সীমানা: প্রবন্ধ (১৯৭৬ সাল)
- মুহূর্তের কবিতা: ফররুখ আহমদ-সম্পাদনা (১৯৭৬ সাল);
- শেক্সপিয়রের সনেট ভূমিকা ও কাব্যানুবাদসহ (১৯৭৭ সাল)
- শব্দের সীমানা (১৯৭৭ সাল)
- হে বন্য স্বপ্নেরা: ফররুখ আহমেদ-সম্পাদনা (১৯৭৮ সাল)
- Literature of Bangladesh and other essays (১৯৮৩ সাল)
- আমার দেশ আমার ভাষা: প্রবন্ধ সংকলন (১৯৮৪ সাল)
- চাঁদ ডুবে গেলে: কবিতা (১৯৮৪ সাল)
- অনুবাদ (ভাষা শহীদ গ্রন্থপালা সিরিজ)( ১৯৮৫ সাল)
- দ্যা টেম্পেস্ট শেক্সপিয়র, ভূমিকাসহ অনুবাদ (১৯৮৫ সাল)
- পৃথিবী ও পাসপোর্ট: রম্যরচনা (১৯৮৬ সাল)
- বাংলা প্রবন্ধ পরিচয়: সংকলক ও সম্পাদক (১৯৮৬ সাল)
- আসন্ন বাস্তিল: কবিতা (১৯৮৮ সাল)
- শান্তিনিকেতনে তিনমাস: জার্নাল (১৯৮৯ সাল)
- বাঙালীর আত্মপরিচয়: প্রবন্ধ(১৯৯১ সাল)
- বাংলা একাডেমি ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশেনারি: সম্পাদক (১৯৯৩ সাল)
- প্রবাসে প্রতিদিন ভ্রমণ: দিনলিপি (১৯৯৪ সাল)
- যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম (১৯৯৭ সাল)
- Visions and revisions (১৯৯৭ সাল)
- বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা: সংকট ও সম্ভাবনা (২০০০ সাল)
- কবিতা সংগ্রহ (২০০১ সাল)
- Quest For a Civil Society (২০০১ সাল)
- আমার চলার পথে: আত্মজীবনী (২০০৩ সাল)
- গ্রামের নাম খিদিরপুর: প্রবন্ধ (২০০৪ সাল)
- Higher Education in Bangladesh, 1947-1992
- বাংলা প্রবন্ধ পরিচয়
- সাহিত্যের স্বদেশ বিদেশ
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী নির্বাচিত প্রবন্ধ
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী রচনাবলী-১
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী রচনাবলী-২
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী রচনাবলী-৩
- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কবিতাসংগ্রহ
- অনুবাদ[৫]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী আর নেই: প্রতিবেদন"। prothom-alo.com। নভেম্বর ১২, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১২, ২০১৪।
- ↑ ক খ [১]
- ↑ 'আমার চলার পথে' লেখক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, প্রকাশক: কমলকান্তি দাস, মোরশেদ আলম, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ, ১ম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৩
- ↑ ক খ [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১২।
- বাংলাদেশী সাহিত্যিক
- ১৯২৮-এ জন্ম
- বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ
- বাংলাদেশী অনুবাদক
- বাংলাদেশী কবি
- শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- বাংলাদেশী শিক্ষায়তনিক
- শাহাবুদ্দিন আহমেদের মন্ত্রিসভার সদস্য
- বাঙালি লেখক
- বাংলা-ইংরেজি অনুবাদক
- ২০১৪-এ মৃত্যু
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী
- ২০শ শতাব্দীর অনুবাদক
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
- বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
- ঝিনাইদহ জেলার ব্যক্তি