Nothing Special   »   [go: up one dir, main page]

বিষয়বস্তুতে চলুন

ওমেগা বিন্দু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এটি ওমেগা পয়েন্টের মাল্টিভার্স গঠনের একটি চিত্র রয়েছে (যদিও মনে রাখবেন যে ওমেগা পয়েন্টের প্রকৃত পদার্থবিজ্ঞানগুলি কোনও মাল্টিভার্স ধারণার উপর নির্ভরশীল নয়)

ওমেগা বিন্দু (Omega point) হচ্ছে সেই পরমবিন্দু যার দিকে এ মহাবিশ্ব তার সকল ধরনের ভৌত জটিলতা ও সচেতনতার ক্রমোন্নত এক উচ্চতর স্তরমুখী পথে ধাবমান। এটি জ্ঞানের চূড়ান্ত পর্যায়কে বোঝায়। মানবজাতির সর্বশেষ অবস্থা তথা পূর্ণ জ্ঞানের স্তরকেই এটি নির্দেশ করে।

পরমবিন্দুর ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ফরাসি জেসুইট পিয়ের তাঁয়ার দ্য শারদাঁ (১৮৮১-১৯৫৫) এই ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। মহাবিশ্ব সর্বদা অধিকতর জটিল এবং সচেতন অবস্থায় বিবর্তিত হচ্ছে, তাঁয়ার বিবর্তনের এই তত্ত্বটিই মনে প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একে জটিলতা বা চেতনার নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। সময়ের সাথে সাথে পদার্থ জটিলতর রূপ ধারণ করে এবং অধিকতর সচেতন অবস্থায় উপনীত হতে থাকে। তাঁয়ার বলেন, এমন বিবর্তন তখনই সম্ভব যদি উচ্চতর কোন অবস্থা মহাবিশ্বকে তার দিকে টেনে নিতে থাকে। কারণ নিম্নতর চেতনার অবস্থা নিজে থেকে উচ্চতর চেতনার অবস্থার জন্ম দিতে পারে না। এ থেকেই তাঁয়ার স্বীকার্য প্রণয়ন করেন যে, ওমেগা পয়েন্ট চেতনার একটি ক্রান্তি বিন্দু যা জটিলতা বা চেতনার নীতি অনুযায়ী মহাবিশ্বকে উচ্চতর চেতনার অবস্থার টেনে নিয়ে যায়। সবচেয়ে জটিল ও সচেতন পদার্থ হল মানুষ। তাই মানুষ স্বভাবতই এ ধরনের চেতনার বিবর্তনের অংশ। এ কারণে মানব জাতি "প্রতিফলন গুণ" বিশিষ্ট। অর্থাৎ মানুষ নিজের উপর প্রতিফলন ঘটাতে পারে তথা মানব জাতি আত্ম-সচেতন। তাঁয়ার নিজের মত করে বলেন, মানুষ সচেতনাভূত । ("The human-being is consciousness squared.)

পাঁচটি ধর্ম

[সম্পাদনা]

দ্য ফেনোমেনা অফ ম্যান গ্রন্থে তাঁয়ার ওমেগা বিন্দুর পাঁচটি ধর্মের উল্লেখ করেছেন। ধর্ম পাঁচটি হল:

  • এটি অবশ্যই ইতোমধ্যে বিরাজ করছে।
  • এটি অবশ্য ব্যক্তিগত হবে- কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বা বা বিমূর্ত ধারণা হওয়া চলবে না।
  • এটি অবশ্য সর্বোৎকৃষ্ট এবং সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে এমন হবে।
  • এটি অবশ্যই স্বায়ত্তশাসিত হবে- স্থান ও কাল থেকে মুক্ত হবে।
  • এটি অবশ্যই অপ্রত্যাবর্তী হবে, অর্থাৎ একে অর্জনীয় হতে হবে।

টিপলারীয় ওমেগা বিন্দু

[সম্পাদনা]

গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাংক জে টিপলার ওমেগা বিন্দু শব্দটি দ্বারা মহাবিশ্বের সুদূর ভবিষ্যতে ভৌতভাবে প্রয়োজনীয় একটি মহাজাগতিক দৃশ্যপট বুঝিয়েছেন। তার ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব অনুসারে, নির্দিষ্ট ধরনের একটি মহা সংকোচনের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব যখন সমাপ্তির দিকে ধাবিত হবে তখন এক্সপোনেনশিয়াল ত্বরণের মাত্রা হবে সময় প্রবাহের চেয়ে বেশি। এই বিষয়টিকে সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখলে তা অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে যদিও কম্পিউটারে তা সসীম দেখাবে। এই তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, মহাবিশ্ব একসময় সংকুচিত হবে এবং সঠিক সময়ে মহাবিশ্বের এই হিসাবকৃত ক্ষমতাটিকে নস্যাৎ করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকবে।

অধ্যাপক টিপলার অসীম তথ্যে ভরপুর এই অসীমতটীয় অবস্থাটির চূড়ান্ত ব্যতিক্রমী বিন্দুকে স্রষ্টার ক্ষমতার সাথে তুলনা করেছেন। টিপলার এবং অধ্যাপক ডেভিড ডয়েচ মনে করেন, বর্তমানের মানব জাতির জন্য এই ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব কার্যকরী হলে এই চূড়ান্ত মহাজাগতিক কম্পিউটার সে পর্যন্ত মহাবিশ্বে বাস করে গেছেন এমন সবাইকেই আবার পুনর্জীবিত করতে পারবে। মাস্টার সিমুলেশনের মধ্যে অবস্থিত সকল কোয়ান্টাম মস্তিষ্ক অবস্থার ইমুলেশন পুনরায় সৃষ্টি করার মাধ্যমেই এটি সম্ভব হবে। এটি সিমুলেশনকৃত বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিবে। সিমুলেশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা অধিবাসীদের সাপেক্ষে পর জীবনটি হবে অসীম। ওমেগা বিন্দুই এই অসীম পর জীবনের প্রতিনিধিত্ব করবে। সিমুলেশন জগতের ভার্চুয়াল প্রকৃতি থাকায় সেটি কাল্পনিক যে কোন রূপ নিতে পারবে।

টিপলারের ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব মহা সংকোচনের মাধ্যমে কার্যকর হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মহা সংকোচন ঘটবে না। টিপলার পরবর্তীকালে তার চিন্তাধারায় কিছু সংশোধন এনেছেন। ধনাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবকের কারণে মহাবিশ্বে যে ত্বরণ বজায় থাকবে তার ব্যবস্থা করতেই এই সংশোধন আনা হয়েছিল। টিপলার আন্তঃনাক্ষত্রিক নভোযানের প্রচালক শক্তি হিসেবে বেরিয়ন টানেলিং প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। এই প্রক্রিয়ায় যদি মহাবিশ্বের বেরিয়নগুলো নিঃশেষ হয়ে যায় তবে হিগ্‌স ক্ষেত্র তার নিরঙ্কুশ শূন্যতায় উপনীত হবে। ফলে ধনাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবক থাকবে না এবং ত্বরণও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্ব ওমেগা বিন্দুতে ধ্বসে পড়বে।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ওমেগা বিন্দু

[সম্পাদনা]

উপন্যাস

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • Pierre Teilhard de Chardin, 1950. The Future of Man.
  • -----, 1955. Le Phénomène Humain (The Human Phenomenon) (1955)
  • Frank J. Tipler, 1986, "Cosmological Limits on Computation," International Journal of Theoretical Physics 25: 617-61.
  • -----, 1994. The Physics of Immortality. Doubleday.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]