আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস
আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস ১২,৫০০ বছর পূর্বকার আয়ারল্যান্ডে মানব অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ থেকে শুরু করে বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি বিবৃত করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৯৭০০ অব্দের দিকে কোয়াটার্নারি ইয়ঙ্গার ড্রায়াস শীতল পর্বের পরে বরফ অপসৃত হলে প্রাগৈতিহাসিক আয়ারল্যান্ডের সূত্রপাত হয়, যার মধ্যে মধ্য প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ, প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে নব্য প্রস্তর যুগ, খ্রিষ্টপূর্ব ২৩০০ অব্দ থেকে তামা এবং ব্রোঞ্জ যুগ এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে শুরু করে লৌহ যুগ অন্তর্ভুক্ত ছিল। আয়ারল্যান্ডের ব্রোঞ্জ যুগটি খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে প্রত্ন-ঐতিহাসিক গ্যালিক আয়ারল্যান্ডের উত্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং মধ্য ইউরোপের কেল্টীয় লা তেনে সংস্কৃতির আগমনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীর শেষের দিকে খ্রিষ্টধর্ম ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পূর্ববর্তী কেল্টীয় বহুবাদের স্থলাভিষিক্ত হতে শুরু করে। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে যাজকীয় কেল্টীয় খ্রিস্টান গির্জার সাথে লেখনীর সূচনা মধ্য দিয়ে আইরিশ সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। খ্রিষ্টীয় ৮ম শতাব্দীর শেষের দিক থেকে ভাইকিংদের আক্রমণ এবং বসতি স্থাপনের ফলে ব্যাপক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের পাশাপাশি সামরিক ও পরিবহন প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন লক্ষ করা যায়। এই সময়ে আয়ারল্যান্ডের অনেকগুলো শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১] ভাইকিংদের অনুপ্রবেশ সীমিত এবং উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং তারা ১০১০ খ্রিষ্টাব্দে ক্লোনটার্ফ যুদ্ধের পরে গ্যালিক সংস্কৃতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ১১৬৯ খ্রিষ্টাব্দে নর্মান আগ্রাসনের ফলে দ্বীপটির আংশিক জয় অর্জিত হয় এবং তা আয়ারল্যান্ডে ইংল্যান্ডের ৮০০ বছরের অধিক সময়ের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপের সূত্রপাত হিসেবে গণ্য হয়। প্রথমদিকে সফল হলে পরবর্তী শতাব্দীতে গ্যালিক পুনরুত্থানের ফলে নর্মানদের অর্জনগুলো বিপরীত মোড় নেয়।[২]
প্রাগৈতিহাসিক (খ্রিষ্টপূর্ব ১০,৫০০ অব্দ-৪০০ খ্রিষ্টাব্দ)
[সম্পাদনা]রোমান লেখনী, আইরিশ কবিতা ও পৌরাণিক কাহিনি, এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে প্রাক-খ্রিষ্টীয় আয়ারল্যান্ডের বর্ণনা পাওয়া যায়। কিছু সম্ভাব্য পুরা প্রস্তর যুগীয় সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তবে কোনটাই পুরা প্রস্তর যুগে আয়ারল্যান্ডে জনবসতি ছিল একথা সমর্থনের জন্য উপযুক্ত নয়।[৩] ১৯০৩ সালে অ্যালিস অ্যান্ড গুয়েন্ডোলিন গুহায় প্রাপ্ত ভল্লুকের হাড় খ্রিষ্টপূর্ব ১০,৫০০ অব্দে আয়ারল্যান্ডে প্রারম্ভিক মানব বসতি থাকাকে সমর্থন করে। হাড়টিতে পাথরের সরঞ্জাম দিয়ে কাটার পরিষ্কার চিহ্ন রয়েছে এবং রেডিওকার্বন কাল নিরূপন অনুসারে তা ১২,৫০০ বছর পূর্বের।[৪]
প্রারম্ভিক খ্রিষ্টীয় আয়ারল্যান্ড (৪০০-৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)
[সম্পাদনা]১ম সহস্রাব্দের মধ্যবর্তী শতাব্দীগুলোতে আয়ারল্যান্ডে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। রাজনৈতিকভাবে আদিবাসীদের প্রভাব পরিবর্তিত হয়ে ৮ম শতাব্দীতে এই দ্বীপের রাজ্যগুলোতে পিতৃতান্ত্রিক রাজবংশের শাসনে রূপ নেয়। পূর্ববর্তী অনেক ক্ষমতাধর রাজ্য ও জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আইরিশ জলদস্যুরা পশ্চিম ব্রিটেন উপকূল জুড়ে আক্রমণ চালায়, যেমনটা পরবর্তী কালে ভাইকিংরা আয়ারল্যান্ডে চালিয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন পিক্টল্যান্ডে, এবং সীমিত আকারে কর্নওয়াল, ওয়েলস ও কামব্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। দক্ষিণ লেনস্টারের আট্টাকোট্টি জাতি ৩০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ পর্যন্ত রোমান সামরিক বাহিনীতেও কর্মরত ছিল।[৫]
আধুনিক আয়ারল্যান্ড
[সম্পাদনা]বিশ্ব অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতি পূর্বের থেকে আরও বৈচিত্রময় ও অত্যাধুনিক হয়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালে আয়ারল্যান্ডে ইউরোপীয় জোট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বসূরি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক জোটে (ইইসি) যোগদান করে। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে আয়ারল্যান্ড নিজেদের আধুনিক উৎপাদনমুখী শিল্প অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করে এবং বিপুল জাতীয় আয় অর্জন করে। কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও আয়ারল্যান্ডের উৎপাদনমুখী শিল্প অর্থনীতি অত্যাধুনিক পণ্য উৎপাদন করে যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। ১৯৯০-এর দশকের আয়ারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সেল্টিক টাইগার নামে পরিচিত।
এক সময় ক্ষমতার চর্চা করা ক্যাথলিক গির্জাগুলোর আয়াল্যান্ডের সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়াদিতে প্রভাব কমতে থাকে। আইরিশ বিশপগণের জনগণকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা বিষয়ে উপদেশ দেওয়া এবং তাদেরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা করে যায়। আধুনিক আয়ারল্যান্ডের গির্জা থেকে সরে গিয়ে সাধারণ জীবনযাপন পিছনে প্রধান কারণ হল তরুণ প্রজন্মের গির্জার রীতিনীতির প্রতি অনাগ্রহ ও গির্জার প্রতিনিধিদের প্রশ্নবিদ্ধ নৈতিকতা। একটি বহুল আলোচিত ঘটনা ছিল ১৯৯২ সালে গ্যালওয়ের বিশপ ইয়ামন ক্যাসির সাথে একজন মার্কিন নারীর সম্পর্ক এবং তার সন্তানের পিতা হওয়া। এছাড়াও যাজকদের সমকামী ও শিশু নির্যাতন বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। ফলে অনেক আইরিশ জনগণ ক্যাথলিক গির্জার বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "What have the Vikings ever done for us?"। দি আইরিশ টাইমস।
- ↑ ইগান, সিমন পিটার (১৮ ডিসেম্বর ২০১৮)। "The Resurgence of Gaelic power in Ireland and Scotland and its wider impact, c.1350-1513" – cora.ucc.ie-এর মাধ্যমে।
- ↑ ওকেলি, মাইকেল জে.; ওকেলি, ক্লেয়ার (১৯৮৯)। Early Ireland: an introduction to Irish prehistory। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 0-521-33687-2।
- ↑ "Earliest evidence of humans in Ireland"। বিবিসি নিউজ। ২১ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২০।
- ↑ র্যান্স, ফিলিপ, (২০০১)। Attacotti, Déisi and Magnus Maximus: the Case for Irish Federates in Late Roman Britain। ব্রিটানিকা। পৃষ্ঠা ২৪২-২৭০।
- ↑ পাসেতা, সেনিয়া (২০০৩)। Modern Ireland: A Very Short Introduction। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১২৮-১৪১।