Nothing Special   »   [go: up one dir, main page]

বিষয়বস্তুতে চলুন

সুফিয়া কামাল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
জন্ম: বিষয়বস্তু যোগ করেছি
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
 
(১২ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ১৮টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
| চিত্র = সুফিয়া কামাল.jpg
| চিত্র = সুফিয়া কামাল.jpg
| শিরোলিপি = সুফিয়া কামাল
| শিরোলিপি = সুফিয়া কামাল
| জন্ম_নাম = সৈয়দা সুফিয়া বেগম
| স্থানীয়_নাম =
| জন্ম_তারিখ = {{জন্ম তারিখ|1911|6|20|mf=y}}
| জন্ম_তারিখ = {{জন্ম তারিখ|1911|6|20|mf=y}}
| জন্ম_স্থান = [[বরিশাল জেলা|বরিশাল]], [[ব্রিটিশ ভারত]] (বর্তমান: [[বাংলাদেশ]])
| জন্ম_স্থান = [[বরিশাল জেলা|বরিশাল]], [[ব্রিটিশ ভারত]] (বর্তমান: [[বাংলাদেশ]])
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
| মৃত্যু_স্থান = [[ঢাকা]], বাংলাদেশ
| মৃত্যু_স্থান = [[ঢাকা]], বাংলাদেশ
| পেশা = [[কবি]], [[লেখিকা]]
| পেশা = [[কবি]], [[লেখিকা]]
| বাসস্থান =
| ভাষা = বাংলা
| বাসস্থান = ঢাকা
| জাতীয়তা = বাংলাদেশী[[চিত্র:Flag of Bangladesh.svg|20px]]
| জাতীয়তা = বাংলাদেশী[[চিত্র:Flag of Bangladesh.svg|20px]]
| উল্লেখযোগ্য_রচনাবলি = সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী
| উল্লেখযোগ্য_রচনাবলি = সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী
| পুরস্কার = [[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]] (১৯৬২)<br />[[একুশে পদক]] (১৯৭৬)<br />[[স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার]] (১৯৯৭)
| পুরস্কার = [[বাংলা একাডেমি পুরস্কার]] (১৯৬২)<br />[[একুশে পদক]] (১৯৭৬)<br />[[স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার]] (১৯৯৭)
| দাম্পত্যসঙ্গী = সৈয়দ নেহাল হোসেন (১৯২২-১৯৩২; বিধবা) <br /> কামালউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৭-)
| দাম্পত্যসঙ্গী = সৈয়দ নেহাল হোসেন (১৯২২-১৯৩২; বিধবা) <br /> কামালউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৯ - ১৯৭৭)
| সন্তান = আমেনা আক্তার<br />[[সুলতানা কামাল]]<br />সাঈদা কামাল<br />শাহেদ কামাল<br />সাজেদ কামাল
| সন্তান = আমেনা আক্তার<br />[[সুলতানা কামাল]]<br />সাঈদা কামাল<br />শাহেদ কামাল<br />সাজেদ কামাল
}}
}}
'''বেগম সুফিয়া কামাল''' (২০শে জুন ১৯১১ - ২০শে নভেম্বর ১৯৯৯) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন প্রথিতযশা [[কবি]], [[লেখিকা]], [[নারীবাদী]] ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.poemhunter.com/sufia-kamal/biography/|শিরোনাম=Biography of Sufia Kamal|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=poemhunter.com|প্রকাশক=|ভাষা=ইংরেজি|সংগ্রহের-তারিখ=}}</ref>


== জন্ম ও বংশ ==
'''বেগম সুফিয়া কামাল''' (২০ জুন ১৯১১ - ২০ নভেম্বর ১৯৯৯) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন প্রথিতযশা [[কবি]], [[লেখিকা]], [[নারীবাদী]] ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.poemhunter.com/sufia-kamal/biography/|শিরোনাম=Biography of Sufia Kamal|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=poemhunter.com|প্রকাশক=|ভাষা=ইংরেজি|সংগ্রহের-তারিখ=}}</ref>
সৈয়দা সুফিয়া বেগম ২০শে জুন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের তৎকালীন [[পূর্ববঙ্গ ও আসাম]] প্রদেশের [[বাকেরগঞ্জ জেলা (ব্রিটিশ ভারত)|বাকেরগঞ্জ জেলার]] শায়েস্তাবাদে মামার বাড়ি রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি সম্ভ্রান্ত [[বাঙালি মুসলমান]] জমিদার খান্দানের মেয়ে ছিলেন যারা [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়িয়ার]] অন্তর্গত​ শিলাউরের [[সৈয়দ]] বংশ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সাত বছর থাকতে, তাঁর বাবা সৈয়দ আব্দুল বারী ওকালতি চাকরি এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসি-সুফি হয়ে যান। তাই সুফিয়া তাঁর মা সৈয়দা সাবেরা বেগমের সাথে মামার বাড়িতেই বড় হন। সুফিয়ার নানা [[খান বাহাদুর]] নবাব সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন জমিদার এবং বিখ্যাত ম্যাজিস্টেট।<ref name=siraj>{{cite book|title=বরিশাল বিভাগের ইতিহাস|year=২০১০|author=[[সিরাজ উদদীন আহমেদ]]|volume=১|publisher=ভাস্কর প্রকাশনী|location=[[ঢাকা]]|chapter=শায়েস্তাবাদের জমিদার পরিবার}}</ref><ref name="onushilon.org">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://onushilon.org/corita/sufia.htm|শিরোনাম=সুফিয়া কামাল, কবি|প্রকাশক=}}</ref>

== জন্ম ==
সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন [[বরিশাল জেলা|বরিশালের]] শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন।<ref name="onushilon.org">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://onushilon.org/corita/sufia.htm|শিরোনাম=সুফিয়া কামাল, কবি|প্রকাশক=}}</ref> তার বাবা বৃহত্তর [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লার]] বাসিন্দা ছিলেন বর্তমান [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়িয়ার]]। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। স্কুল-কলেজে পড়ার কোন সুযোগ তাদের ছিলো না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থানপতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।


== প্রাথমিক জীবন ==
== প্রাথমিক জীবন ==
[[File:Kamaluddin Ahmed Sufia Kamal.jpg|thumb|সুফিয়া কামাল তার স্বামী কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে (১৯৩৯)]]
[[File:Kamaluddin Ahmed Sufia Kamal.jpg|thumb|সুফিয়া কামাল তার স্বামী কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে (১৯৩৯)]]
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে সুফিয়ার যখন সাত বছর বয়স তখন তার বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন। ফলে তাকে তার মা সাবেরা খাতুন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এই কারণে তার শৈশব কেটেছিল নানার বাড়িতে।<ref name="onushilon.org"/><ref name="banglapedia.org">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2,_%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A6%AE_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE|শিরোনাম=কামাল, বেগম সুফিয়া - বাংলাপিডিয়া|প্রকাশক=}}</ref>
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সুফিয়ার যখন সাত বছর বয়স তখন তার বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন। ফলে তাকে তার মা সাবেরা খাতুন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এই কারণে তার শৈশব কেটেছিল নানার বাড়িতে।<ref name="onushilon.org"/><ref name="banglapedia.org">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2,_%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A6%AE_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE|শিরোনাম=কামাল, বেগম সুফিয়া - বাংলাপিডিয়া|প্রকাশক=}}</ref>


যে পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন সেখানে নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হত না। তার মাতৃকুল ছিল শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারের এবং সেই পরিবারের কথ্য ভাষা ছিল উর্দু। এই কারণে অন্দরমহলে মেয়েদের আরবি, ফারসি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা শেখানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। তিনি [[বাংলা]] শেখেন মূলত তার মায়ের কাছে। নানাবাড়িতে তার বড় মামার একটি বিরাট গ্রন্থাগার ছিল। মায়ের উৎসাহ ও সহায়তায় এ লাইব্রেরির বই পড়ার সুযোগ ঘটেছিল তার।<ref name="onushilon.org"/>
যে পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন সেখানে নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হত না। তার মাতৃকুল ছিল শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারের এবং সেই পরিবারের কথ্য ভাষা ছিল উর্দু। এই কারণে অন্দরমহলে মেয়েদের আরবি, ফারসি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা শেখানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। তিনি [[বাংলা]] শেখেন মূলত তার মায়ের কাছে। নানাবাড়িতে তার বড় মামার একটি বিরাট গ্রন্থাগার ছিল। মায়ের উৎসাহ ও সহায়তায় এ লাইব্রেরির বই পড়ার সুযোগ ঘটেছিল তার।<ref name="onushilon.org"/>
৪২ নং লাইন: ৪২ নং লাইন:
== ঢাকার জীবন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ==
== ঢাকার জীবন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ==


১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ [[ঢাকা|ঢাকায়]] চলে আসেন। [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান। ১৯৬১ সালে [[পাকিস্তান]] সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এই বছরে তিনি [[ছায়ানট|ছায়ানটের]] প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতঃপূর্বে প্রদত্ত [[তমঘা-ই-ইমতিয়াজ]] পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে [[মহিলা পরিষদ]] প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=মজিদ |প্রথমাংশ1=পিয়াস |শিরোনাম=মুক্তিযুদ্ধের সুফিয়া কামাল |ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2 |সংগ্রহের-তারিখ=২১ জুন ২০২১ |কর্ম=প্রথম আলো |তারিখ=২০ জুন ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref><ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ |ইউআরএল=https://www.jagonews24.com/literature/news/676995 |সংগ্রহের-তারিখ=২১ জুন ২০২১ |কর্ম=জাগোনিউজ২৪.কম |তারিখ=২০ জুন ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref> [[বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধের]] সময় তার বাসভবন সংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর ঐ সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন ।<ref>[http://www.banglanews24.com/news.php?nssl=69317 সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরি। ]{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }} বিডিনিউজ ২৪ ডট কম</ref>
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ [[ঢাকা|ঢাকায়]] চলে আসেন। [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান। ১৯৬১ সালে [[পাকিস্তান]] সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এই বছরে তিনি [[ছায়ানট|ছায়ানটের]] প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, [[পাকিস্তান সরকার]] কর্তৃক ইতঃপূর্বে প্রদত্ত [[তমঘা-ই-ইমতিয়াজ]] পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে [[মহিলা পরিষদ]] প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=মজিদ |প্রথমাংশ1=পিয়াস |শিরোনাম=মুক্তিযুদ্ধের সুফিয়া কামাল |ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2 |সংগ্রহের-তারিখ=২১ জুন ২০২১ |কর্ম=প্রথম আলো |তারিখ=২০ জুন ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref><ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ |ইউআরএল=https://www.jagonews24.com/literature/news/676995 |সংগ্রহের-তারিখ=২১ জুন ২০২১ |কর্ম=জাগোনিউজ২৪.কম |তারিখ=২০ জুন ২০২১ |ভাষা=bn}}</ref> [[বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধের]] সময় তার বাসভবন সংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর ঐ সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন ।<ref>[http://www.banglanews24.com/news.php?nssl=69317 সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরি। ]{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }} বিডিনিউজ ২৪ ডট কম</ref>


স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফ্যু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং [[সাম্প্রদায়িকতা]] ও [[মৌলবাদ|মৌলবাদের]] বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফ্যু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং [[সাম্প্রদায়িকতা]] ও [[মৌলবাদ|মৌলবাদের]] বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।


== সাহিত্যকর্ম ==
== মৃত্যু ==
=== কাব্যগ্রন্থ ===
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। প্রতি বছর এই দিনটিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।<ref>[https://www.banglanews24.com/national/news/bd/618599.details সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে শ্রদ্ধা]</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.ittefaq.com.bd/culture/2017/11/20/136485.html |শিরোনাম=কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ |সংগ্রহের-তারিখ=১৩ অক্টোবর ২০১৮ |আর্কাইভের-তারিখ=২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20171228173906/http://www.ittefaq.com.bd/culture/2017/11/20/136485.html |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref>


২০ জুন, ২০১৯ তারিখে তার ১০৮তম [[জন্মদিন]] উপলক্ষ্যে [[গুগল]] ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Sufia Kamal’s 108th Birthday|ইউআরএল=https://www.google.com/doodles/sufia-kamals-108th-birthday|ওয়েবসাইট=www.google.com|প্রকাশক=গুগল|সংগ্রহের-তারিখ=২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯}}</ref>

== রচনা ==

=== কাব্যগ্রন্থ ===
* ''সাঁঝের মায়া'' (১৯৩৮)
* ''সাঁঝের মায়া'' (১৯৩৮)
* ''মায়া কাজল'' (১৯৫১)
* ''মায়া কাজল'' (১৯৫১)
৬৩ নং লাইন: ৫৮ নং লাইন:
* ''মৃত্তিকার ঘ্রাণ'' (১৯৭০)
* ''মৃত্তিকার ঘ্রাণ'' (১৯৭০)
* ''মোর জাদুদের সমাধি পরে'' (১৯৭২)
* ''মোর জাদুদের সমাধি পরে'' (১৯৭২)
* Mother of Pearls and Other Poems (English poem)
=== গল্প ===
=== গল্প ===
* ''কেয়ার কাঁটা'' (১৯৩৭)
* ''কেয়ার কাঁটা'' (১৯৩৭)
* ''মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির জয়'' (মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ)

=== ভ্রমণকাহিনি ===
=== ভ্রমনকাহিনী ===
* সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮)
* ''সোভিয়েতে দিনগুলি'' (১৯৬৮)

=== স্মৃতিকথা ===
=== স্মৃতিকথা ===
* ''একাত্তরের ডায়েরি'' (১৯৮৯)
* ''একাত্তরের ডায়েরি'' (১৯৮৯)
=== আত্মজীবনী ===
=== আত্মজীবনীমূলক রচনা ===
* ''একালে আমাদের কাল'' (১৯৮৮)
* ''একালে আমাদের কাল'' (১৯৮৮)
=== শিশুতোষ ===
=== শিশুতোষ ===
৮০ নং লাইন: ৭৫ নং লাইন:


== পুরস্কার ==
== পুরস্কার ==
সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মাঝে কয়েকটি:
সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
* [[পাকিস্তান]] সরকারের [[তমঘা-ই-ইমতিয়াজ]] (১৯৬১) (প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯)
* [[পাকিস্তান]] সরকারের [[তমঘা-ই-ইমতিয়াজ]] (১৯৬১) (প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯)
* [[বাংলা একাডেমী|বাংলা একাডেমী পুরস্কার]] (১৯৬২)
* [[বাংলা একাডেমী|বাংলা একাডেমী পুরস্কার]] (১৯৬২)
* সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
* সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
* [[একুশে পদক]] (১৯৭৬)
* [[একুশে পদক]] (১৯৭৬)
* নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
* নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
* সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১)
* সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১)
* মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২)
* মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২)
৯১ নং লাইন: ৮৬ নং লাইন:
* জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
* জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
* দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
* দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
* [[স্বাধীনতা পুরস্কার]] (১৯৯৭)<ref name="banglapedia.org"/>
* [[স্বাধীনতা পুরস্কার]] (১৯৯৭)<ref name="banglapedia.org" />

== মৃত্যু ==
সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। প্রতি বছর এই দিনটিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।<ref>[https://www.banglanews24.com/national/news/bd/618599.details সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে শ্রদ্ধা]</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ|ইউআরএল=http://www.ittefaq.com.bd/culture/2017/11/20/136485.html|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20171228173906/http://www.ittefaq.com.bd/culture/2017/11/20/136485.html|আর্কাইভের-তারিখ=২৮ ডিসেম্বর ২০১৭|সংগ্রহের-তারিখ=১৩ অক্টোবর ২০১৮}}</ref>

২০শে জুন ২০১৯ সালে তাঁর ১০৮তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে [[গুগল]] ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|প্রকাশক=গুগল|শিরোনাম=Sufia Kamal’s 108th Birthday|ইউআরএল=https://www.google.com/doodles/sufia-kamals-108th-birthday|সংগ্রহের-তারিখ=২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ওয়েবসাইট=www.google.com}}</ref>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
১২৫ নং লাইন: ১২৫ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নারীবাদী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নারীবাদী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় নারীবাদী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর লেখিকা]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী লেখক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নারী কবি]]
[[বিষয়শ্রেণী:আরব বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:একুশে পদক বিজয়ী]]
[[বিষয়শ্রেণী:স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাঙালি]]

১৮:১৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সুফিয়া কামাল
সুফিয়া কামাল
সুফিয়া কামাল
জন্মসৈয়দা সুফিয়া বেগম
(১৯১১-০৬-২০)২০ জুন ১৯১১
বরিশাল, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান: বাংলাদেশ)
মৃত্যুনভেম্বর ২০, ১৯৯৯(1999-11-20) (বয়স ৮৮)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাকবি, লেখিকা
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিসাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২)
একুশে পদক (১৯৭৬)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭)
দাম্পত্যসঙ্গীসৈয়দ নেহাল হোসেন (১৯২২-১৯৩২; বিধবা)
কামালউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৯ - ১৯৭৭)
সন্তানআমেনা আক্তার
সুলতানা কামাল
সাঈদা কামাল
শাহেদ কামাল
সাজেদ কামাল

বেগম সুফিয়া কামাল (২০শে জুন ১৯১১ - ২০শে নভেম্বর ১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা, নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।[]

জন্ম ও বংশ

[সম্পাদনা]

সৈয়দা সুফিয়া বেগম ২০শে জুন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের বাকেরগঞ্জ জেলার শায়েস্তাবাদে মামার বাড়ি রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলমান জমিদার খান্দানের মেয়ে ছিলেন যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত​ শিলাউরের সৈয়দ বংশ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সাত বছর থাকতে, তাঁর বাবা সৈয়দ আব্দুল বারী ওকালতি চাকরি এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসি-সুফি হয়ে যান। তাই সুফিয়া তাঁর মা সৈয়দা সাবেরা বেগমের সাথে মামার বাড়িতেই বড় হন। সুফিয়ার নানা খান বাহাদুর নবাব সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন একজন জমিদার এবং বিখ্যাত ম্যাজিস্টেট।[][]

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]
সুফিয়া কামাল তার স্বামী কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে (১৯৩৯)

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সুফিয়ার যখন সাত বছর বয়স তখন তার বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন। ফলে তাকে তার মা সাবেরা খাতুন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এই কারণে তার শৈশব কেটেছিল নানার বাড়িতে।[][]

যে পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন সেখানে নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হত না। তার মাতৃকুল ছিল শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারের এবং সেই পরিবারের কথ্য ভাষা ছিল উর্দু। এই কারণে অন্দরমহলে মেয়েদের আরবি, ফারসি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা শেখানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বাংলা শেখেন মূলত তার মায়ের কাছে। নানাবাড়িতে তার বড় মামার একটি বিরাট গ্রন্থাগার ছিল। মায়ের উৎসাহ ও সহায়তায় এ লাইব্রেরির বই পড়ার সুযোগ ঘটেছিল তার।[]

১৯২২ সনে ১১ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়।[] নেহাল অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক ছিলেন, তিনি সুফিয়া কামালকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়ার যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি।[] সুফিয়া সে সময়ের বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিলো। সুফিয়া কামালের শিশুমনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলো বেগম রোকেয়ার কথা ও কাজ। সুফিয়া কামালের কাজেকর্মেও ছাপ পাওয়া যায় বেগম রোকেয়ার।[]

সাহিত্যচর্চার সূচনা এবং কলকাতার জীবন

[সম্পাদনা]

সাহিত্যপাঠের পাশাপাশি সুফিয়া কামাল সাহিত্য রচনা শুরু করেন। ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা 'বাসন্তী' সেসময়ের প্রভাবশালী সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের দেখা পান। মুসলিম নারীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলামে’ রোকেয়ার সঙ্গে সুফিয়া কামালের পরিচয় হয়। বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা তার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, যা তার জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

নিজের সাহিত্য প্রয়াসের সূচনা প্রসঙ্গে তিনি এ ভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন, “‘এমনি কোনো বর্ষণমুখর দিনে মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলামের লেখা `হেনা` পড়ছিলাম বানান করে। প্রেম, বিরহ, মিলন এসবের মানে কি তখন বুঝি? তবু যে কী ভালো, কী ব্যথা লেগেছিল তা প্রকাশের ভাষা কি আজ আর আছে? গদ্য লেখার সেই নেশা। এরপর প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়তে পড়তে অদ্ভুত এক মোহগ্রস্ত ভাব এসে মনকে যে কোন্‌ অজানা রাজ্যে নিয়ে যেতো। এরপর দেখতাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম সারা তাইফুর লিখছেন। কবিতা লিখছেন বেগম মোতাহেরা বানু। মনে হলো ওরা লিখছেন আমিও কি লিখতে পারি না? শুরু হলো লেখা লেখা খেলা। কী গোপনে, কত কুণ্ঠায়, ভীষণ লজ্জার সেই হিজিবিজি লেখা ছড়া, গল্প। কিন্তু কোনোটাই কি মনের মতো হয়! কেউ জানবে, কেউ দেখে ফেলবে বলে ভয়ে ভাবনায় সে লেখা কত লুকিয়ে রেখে আবার দেখে দেখে নিজেই শরমে সংকুচিত হয়ে উঠি।”[]

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে। ১৯৩৭ সালে তাঁর গল্পের সংকলন কেয়ার কাঁটা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়ার মুখবন্ধ লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি বিদগ্ধজনের প্রশংসা কুড়ায় যাদের মাঝে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় নিপতিত করে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দেশবিভাগের পূর্বে কিছু কাল তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত সাময়িকী বেগমের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা ছিলেন।[]

ঢাকার জীবন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এই বছরে তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতঃপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন।[][১০] মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাসভবন সংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর ঐ সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন ।[১১]

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফ্যু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতামৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

সাহিত্যকর্ম

[সম্পাদনা]

কাব্যগ্রন্থ

[সম্পাদনা]
  • সাঁঝের মায়া (১৯৩৮)
  • মায়া কাজল (১৯৫১)
  • মন ও জীবন (১৯৫৭)
  • প্রশস্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮)
  • উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪)
  • দিওয়ান (১৯৬৬)
  • অভিযাত্রিক (১৯৬৯)
  • মৃত্তিকার ঘ্রাণ (১৯৭০)
  • মোর জাদুদের সমাধি পরে (১৯৭২)
  • Mother of Pearls and Other Poems (English poem)
  • কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭)
  • মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির জয় (মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ)

ভ্রমণকাহিনি

[সম্পাদনা]
  • সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮)

স্মৃতিকথা

[সম্পাদনা]
  • একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)

আত্মজীবনী

[সম্পাদনা]
  • একালে আমাদের কাল (১৯৮৮)

শিশুতোষ

[সম্পাদনা]
  • ইতল বিতল (১৯৬৫)
  • নওল কিশোরের দরবারে (১৯৮১)

অনুবাদ

[সম্পাদনা]
  • সাঁঝের মায়া - বলশেভনী সুমের্কী (রুশ) (১৯৮৪)

পুরস্কার

[সম্পাদনা]

সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। প্রতি বছর এই দিনটিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।[১২][১৩]

২০শে জুন ২০১৯ সালে তাঁর ১০৮তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।[১৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Biography of Sufia Kamal"poemhunter.com (ইংরেজি ভাষায়)। 
  2. সিরাজ উদদীন আহমেদ (২০১০)। "শায়েস্তাবাদের জমিদার পরিবার"। বরিশাল বিভাগের ইতিহাসঢাকা: ভাস্কর প্রকাশনী। 
  3. "সুফিয়া কামাল, কবি" 
  4. "কামাল, বেগম সুফিয়া - বাংলাপিডিয়া" 
  5. আমাদের সুফিয়া কামাল ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুন ২০১৪ তারিখে আমাদের বরিশাল ডট কম
  6. সুফিয়া কামালের রূপকথা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখে বিডিনিউজ ২৪ ডট কম
  7. সুফিয়া কামালের দর্শন এবং সময় বাস্তবতা
  8. বেগম, বাংলাপিডিয়া
  9. মজিদ, পিয়াস (২০ জুন ২০২১)। "মুক্তিযুদ্ধের সুফিয়া কামাল"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২১ 
  10. "কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ"জাগোনিউজ২৪.কম। ২০ জুন ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২১ 
  11. সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরি। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] বিডিনিউজ ২৪ ডট কম
  12. সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে শ্রদ্ধা
  13. "কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ"। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৮ 
  14. "Sufia Kamal's 108th Birthday"www.google.com। গুগল। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]