জীবভূগোল
জীবভূগোল (ইংরেজি: Biogeography) বা জৈব-ভূগোল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের ভৌগোলিক বণ্টন বিষয়ক বিজ্ঞানের নাম। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এবং ভৌগোলিক ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে। জীবভূগোলকে সাধারণত জীববিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে এর উন্নয়নে ভৌত ভূগোলবিদদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, বিশেষ করে উদ্ভিদের বণ্টন বিষয়ে। এছাড়া জীবভূগোলের সাথে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ও বাস্তুবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।[১]
জীবভূগোল পৃথিবীকে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে, যে অঞ্চলগুলোর একেকটিতে জীবজগৎ একেক রকম। তবে এই বিভাজন সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে হলেও পরিবর্তিত হয়। বর্তমান এবং অতীতের অনেক কিছু জীবকূলের বণ্টনকে প্রভাবিত করে। যেমন, বর্তমান জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থা, পৃথিবীর বিভিন্ন ভূভাগের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও জলবায়ু, জীবকূলের বিবর্তন ইত্যাদি। বর্তমানে মানুষের অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।[২] আধুনিক জীবভূগোল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও তাদের বণ্টনের উপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব বিশ্লেষণ করে, এবং জীবকূলের ভবিষ্যৎ অনুমান করার চেষ্টা করে।[১]
জীবভূগোলের ইতিহাস
সম্পাদনাব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসকে অনেক সময় জীবভূগোলের জনক বলা হয়।[৩] ওয়ালেস মালয় দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণের সময় জীবকূলের, বিশেষ করে প্রাণীদের ভৌগোলিক বণ্টন সম্পর্কে কিছু অনুকল্প তৈরি করেন। মালয় থেকে ফিরে আসার পর ১৮৭২ সালে বেশ কয়েকজন বন্ধুর (যাদের মধ্যে ছিলেন ডারউইন, ফিলিপ স্ক্লেটার ও আলফ্রেড নিউটন) আবেদনে সাড়া দিয়ে ওয়ালেস পৃথিবীতে প্রাণীদের ভৌগোলিক বণ্টনের উপর একটি সাধারণ রিভিউ প্রণয়নের জন্য গবেষণা শুরু করেন। শুরুতে খুব একটা অগ্রসর হতে পারেননি কারণ তখন প্রাণীদের বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ ছিল। ১৮৭৪ সালে শ্রেণিবিন্যাসের উপর বেশ কিছু নতুন গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর আবার শুরু করেন।
স্ক্লেটার পাখি প্রজাতিসমূহের ভৌগোলিক বণ্টন ব্যাখ্যার জন্য পৃথিবীকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করেছিলেন। ওয়ালেস এই বিভাজন প্রক্রিয়াকে আরও বর্ধিত করেন যাতে করে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পোকামাকড়দের বণ্টনও ব্যাখ্যা করা যায়। প্রাণীদের যে ভৌগোলিক বণ্টন ব্যবস্থা আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ওয়ালেসই তার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। প্রতিটি অঞ্চলে বর্তমান এবং অতীতের সকল প্রাণীর বণ্টন ব্যাখ্যার জন্য যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তার সবগুলো নিয়েই তিনি আলোচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে, স্থলসেতুর (land bridge, যেমন বর্তমান উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগকারী স্থলপথ) উদয় ও বিলুপ্তি এবং প্রবল হিমবাহের প্রভাব। তার তৈরি করা মানচিত্রগুলো প্রাণীদের বণ্টনের উপর বিভিন্ন বিষয় যেমন, পর্বতমালার উচ্চতা, সমুদ্রের গভীরতা, আঞ্চলিক উদ্ভিদজগৎ ইত্যাদির প্রভাব তুলে ধরে। এছাড়া তিনি সে সময় জানা সকল উচ্চতর প্রাণীদের পরিবার ও গোত্রের নাম এবং ভৌগোলিক ব্যাপ্তি লিপিবদ্ধ করেন। লেখাগুলো এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যাতে একজন পরিব্রাজক পড়েই বুঝতে পারে কোন এলাকায় কেমন প্রাণী পাওয়া যায়। এ বিষয়ক সকল গবেষণা ১৮৭৬ সালে দ্য জিওগ্রাফিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন অফ অ্যানিমেল্স (The Geographical Distribution of Animals) নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী ৮০ বছর ধরে এটিই ছিল প্রাণীভূগোলের উপর সর্বাধিক পঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ বই।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ প্রথম পাতার স্বাগতম বার্তা, ইন্টারন্যাশনাল বায়োজিওগ্রাফি সোসাইটির ওয়েবসাইট
- ↑ Biogeography, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৯ জুন ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত
- ↑ Smith, Charles H.। "Alfred Russel Wallace: Evolution of an Evolutionist Introduction"। The Alfred Russel Wallace Page hosted by Western Kentucky University। সংগৃহীত 2007-04-27।
- ↑ Slotten, Ross A. (2004). The Heretic in Darwin's Court: the life of Alfred Russel Wallace. New York: Columbia University Press. আইএসবিএন 0-231-13010-4.
পাঠ্যতালিকা
সম্পাদনা- Albert, J. S., & R. E. Reis (2011). Historical Biogeography of Neotropical Freshwater Fishes. University of California Press, Berkeley. 424 pp. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Albert, J.S., & W.G.R. Crampton (2010). The geography and ecology of diversification in Neotropical freshwaters. Nature Education 1(10): 3.
- Dansereau, Pierre (১৯৫৭)। Biogeography: An Ecological Perspective। New York City: Ronald Press Company। আইএসবিএন 0-8260-2330-4।
- Cox C.B. and Moore P.D. 2010. Biogeography: an ecological and evolutionary approach. 8th ed, Wiley. আইএসবিএন ০-৪৭০-৬৩৭৯৪-৩ (standard text)
- MacArthur, Robert H. (১৯৭২)। Geographic Ecology। New York: Harper & Row।
- McCarthy, Dennis (২০০৯)। Here be dragons : how the study of animal and plant distributions revolutionized our views of life and Earth। Oxford & New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-954246-8।
- মুহাম্মদ মকবুল হোসেন, জীবভূগোল, বাংলা একাডেমী
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- International Biogeography Society
- Systematic & Evolutionary Biogeographical Society
- Early Classics in Biogeography, Distribution, and Diversity Studies: To 1950 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুন ২০০৯ তারিখে
- Early Classics in Biogeography, Distribution, and Diversity Studies: 1951-1975 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ আগস্ট ২০০৯ তারিখে
- Some Biogeographers, Evolutionists and Ecologists: Chrono-Biographical Sketches ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে
- গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক জার্নাল
- Journal of Biogeography homepage ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে.
- Global Ecology and Biogeography homepage ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুলাই ২০১২ তারিখে.
- Ecography homepage.