খোয়াবনামা
খোয়াবনামা বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ উপন্যাস। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি সর্বপ্রথম মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়। একই বছরের এপ্রিলে বইটি পশ্চিমবঙ্গের নয়া উদ্যোগ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। সে বছরই উপন্যাসটি সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার লাভ করে।[১]
লেখক | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
---|---|
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | তেভাগা আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭, বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭) |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশক | মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা |
প্রকাশনার তারিখ | ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ |
মিডিয়া ধরন | ছাপা (শক্তমলাট) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৩৫২ (প্রথম সংস্করণ) |
পুরস্কার | নিচে দেখুন |
আইএসবিএন | ৯৭৮৯৮৪৪১০০৬১৯ |
ওসিএলসি | ৩৫৮৮৪০৮০ |
এলসি শ্রেণী | PK1730.24.L5 K46 1996 |
পূর্ববর্তী বই | চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৬) |
প্রকাশনা
সম্পাদনাউপন্যাসটি ১৯৯৪ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে কিছুকাল প্রকাশিত হয়। তবে সম্পূর্ণ উপন্যাসটি প্রকাশ হওয়ার আগেই রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ এর ছাপা বন্ধ করে দেয়।[২]
কাহিনী ও প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাএই উপন্যাসটি মূলত বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭)-এর কিয়ৎকাল পূর্ব এবং পরবর্তী সময়কাল নিয়ে রচিত। এর কাহিনী বিস্তৃতিলাভ করেছে বগুড়া জেলার একটি ক্ষুদ্রাকার ও প্রত্যন্ত জনপদে। অঞ্চলটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিল, যার নাম কাৎলাহার; এবং কাৎলাহার ঘিরে গড়ে উঠেছে গিরিরডাঙা, নিজগিরির ডাঙা, গোলাবাড়ি হাট ইত্যাদি পল্লীসমূহ। এইসব জনপদে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বিষয়ক বিভিন্ন শ্রুতি বা লোককথা, জোতদারি সমাজব্যবস্থা, তেভাগা আন্দোলন, দেশভাগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক ও সংকট প্রবৃত্তি এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। কাহিনীর প্রয়োজনে এবং বাস্তবতার নিরিখে এতে আরও যুক্ত হয় সাধারণ গ্রাম্য মানুষের অসহায়ত্ব, কাম, ক্ষোভ, ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ, এমনকি অজাচার।
সাহিত্য-সমালোচনা
সম্পাদনাইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাসে মিথের সফল প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।[৩] কথাসাহিত্যিক শওকত আলী তার "খোয়াবনামা-র মিথ: তৃণমূলে যাবার এক পথ" শীর্ষক প্রবন্ধে লেখেন যে,
‘পুরো খোয়াবনামা মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর যে কোনও পাঠকের মনে হবে যে, এ রচনা আলাদা। মাটি মানুষ বিল ঝিল নদী জঙ্গল জন্ম মৃত্যু প্রেম লোভ ঘৃণা দ্বন্দ্ব ইত্যাদি মানবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়, প্রসঙ্গ, আবহ, অতীত আর বর্তমানের সঙ্গে এমনভাবে মেশামেশি হয়ে রয়েছে যে এর পুরো ব্যাপারটা যতখানি-না বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করে বুঝবার, তাঁর চাইতে অনেক বেশি সরাসরি উপলব্ধি করার।’[৪]
পুরস্কার
সম্পাদনাউপন্যাসটির জন্য ইলিয়াস ১৯৯৬ সালে সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ১৯৯৬ সালে ইলিয়াস ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকা অবস্থায় উপন্যাসটি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হয়।[১] শুরুতে ইলিয়াস কোনোক্রমেই পুরস্কারটি গ্রহণ করতে সম্মত হননি। প্রচণ্ড অর্থাভাবে তার চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হবার উপক্রম হলে শুভানুধ্যায়ী সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজনের অনুরোধে, বিশেষত পুরস্কার কমিটির সদস্য আনিসুজ্জামানের আনুরোধে তিনি পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "খোয়াবনামা"। কালের খেয়া। সমকাল। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ আচার্য, অঞ্জন (৪ জানুয়ারি ২০১৭)। "ইলিয়াসের চিলেকোঠায় বসে খোয়াবনামা পাঠ"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২৩।
- ↑ শাহজাহান, চৌধুরী (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "খোয়াবনামা : জীবন জিজ্ঞাসা ও সমকাল"। কালি ও কলম। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২৩।
- ↑ ইউসুফী, এজাজ (২০১৬)। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস : লিরিক বিশেষ সংখ্যা। ঢাকা: বাতিঘর। পৃষ্ঠা ১৮৩। আইএসবিএন 978-984-8825-29-7।
- ↑ মিলন, ইমদাদুল হক (৪ জানুয়ারি ২০১৯)। "আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন আমাদের নায়ক"। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- গ্রন্থাগারে (ওয়ার্ল্ডক্যাট ক্যাটালগ) খোয়াবনামা
- খোয়াবনামা - ওপেন লাইব্রেরি, ইন্টারনেট আর্কাইভ
- গুডরিড্সে খোয়াবনামা