ফলো-অন
ফলো-অন (ইংরেজি: Follow-on) ক্রিকেটের একটি পরিভাষা। যখন কোন দল তাদের প্রথম ইনিংস শেষ করার পরই অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও পুনরায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে বাধ্য হয়, তখন তা ফলো-অন নামে বিবেচিত হয়।[১] কেননা উল্লিখিত দলটি প্রতিপক্ষীয় দলের প্রথম ইনিংসের মোট রানের তুলনায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবার মতো প্রয়োজনীয় রান সংগ্রহ করতে পারেনি। যদি দ্বিতীয় দল প্রথম দলের তুলনায় যথেষ্ট সংখ্যায় রান তুলতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রথম দল দ্বিতীয় দলকে পুনরায় দ্রুততম সময়ে মাঠে নামার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের ইনিংসের ধারাবাহিকতা হচ্ছে - প্রথম দল, দ্বিতীয় দল, দ্বিতীয় দল ও প্রয়োজন পড়লে প্রথম দল আবারো ব্যাটিংয়ে নামবে। এ প্রক্রিয়াটি ব্যাটিং ইনিংসের স্বাভাবিক অগ্রগতির বৈপরীত্য অর্থ বহন করে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে - প্রথম দল, দ্বিতীয় দল, প্রথম দল ও দ্বিতীয় দলের ইনিংস।
এ আইনটি ক্রিকেটের বৈশ্বিক পরিচালনাকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রণীত ক্রিকেটের আইনের ১৩ ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
সর্বনিম্ন ব্যবধান
[সম্পাদনা]একটি দলের রানের সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে যাবার মাধ্যমেই ফলো-অন নির্ভর করে যা ক্রিকেটের আইনের ১৩ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে খেলার দৈর্ঘ্যের উপর ফলো-অনের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হয়:
- পাঁচদিন বা ততোধিক দিনের খেলার ক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাটিংকারী দলকে ফলো-অনে নিয়ে যাবার জন্য কমপক্ষে ২০০ রানের ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে হবে।
- তিন বা চারদিনের খেলার ক্ষেত্রে ১৫০ রান।
- দুইদিনের খেলার ক্ষেত্রে ১০০ রান।
- একদিনের খেলার ক্ষেত্রে প্রতি দলের দুই ইনিংসের ব্যবধান ৭৫ হতে হবে।
খেলা শুরু হবার পর কোন কারণে খেলা সংক্ষিপ্ত আকারের হলে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কতদিন বাকি বা দিনের অংশ বাকি রয়েছে তার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ: কোন খেলা পাঁচদিনের হলে প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে শুরু হয়নি। এ অবস্থায় ব্যাটিংকারী প্রথম দলের প্রথম ইনিংস ১৫০ বা ততোধিক রানে এগিয়ে গেলে ফলো-অন করার সুযোগ রয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি কেবলমাত্র প্রথম বল ফেলার পূর্বে হতে পারে। যদি নির্ধারিত পাঁচদিনের খেলা শুরু হবার পর দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি আঘাত হানলে খেলাটি পাঁচদিনের বলেই পরিগণিত হবে ও ফলো-অনের স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন প্রয়োগ হবে।
ফলো-অনে পাঠানো
[সম্পাদনা]ফলো-অন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয় না। এগিয়ে থাকা দলের অধিনায়কের সিদ্ধান্তের উপর এ প্রক্রিয়াটি বহুলাংশে নির্ভরশীল। তিনিই সিদ্ধান্ত নেন যে, কখন এটি প্রয়োগ হবে বা না। এই কৌশলগত সিদ্ধান্তটি দলের অবস্থা, আবহাওয়া ও পিচ, উভয় পক্ষের শক্তিমত্তা ও বাদ-বাকী সময়ের উপর নির্ভর করে।
সচরাচর ফলো-অনকে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মাইক ব্রিয়ারলি তার ‘দি আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি’ শীর্ষক গ্রন্থে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটিমাত্র অনুচ্ছেদে সামগ্রীকভাবে এর সুবিধাদি তুলে ধরেছেন।[২] ফলো-অন প্রয়োগের জন্য বেশ জোড়ালো কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হচ্ছে সময়। দুই ইনিংসের খেলায় ব্যাটিংকারী প্রথম দলকে জয়ের জন্য প্রতিপক্ষকে দুইবার আউট করার প্রয়োজন পড়ে। তা সম্ভব না হলে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়াবে। পাশাপাশি আরও একটি সাধারণ কৌশল হচ্ছে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাট না করার সম্ভাবনা ও বাদ-বাকী সময়ে খেলাকে এভাবে শেষ করতে নিয়ে যাওয়া। জোরপূর্বক ফলো-অনের দিকে নিয়ে যাওয়া মানেই পিছিয়ে পড়া দলকে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসকে পূর্বেই নিয়ে আসা ও সময়কে ব্যবহার করে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন বিষয় হয়ে দাড়ায়। আরও একটি কারণ হচ্ছে ফলো-অনের ফলে দলের মনোবল আরও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে; অন্যদলের ক্ষেত্রে একইভাবে সমান নেতিবাচক প্রভাববিস্তার করে।
তা স্বত্ত্বেও বেশকিছু কারণে ফলো-অন প্রয়োগ করা হয় না। প্রথমত ও স্বাভাবিকভাবেই ধারাবাহিকভাবে বল করতে বোলারের ক্লান্তিবোধ। এর ফলে প্রতিপক্ষকে প্রথম ইনিংসের ন্যায় দ্বিতীয় ইনিংসে খুব সহজেই ডিসমিস করা হয়ে উঠে না। দ্বিতীয়ত জোরপূর্বক ফলো-অনে না পাঠানোর ফলে চিন্তামুক্ত থাকা যায়। কমপক্ষে দলকে পরাজয়ের দিক থেকে এড়ানো যায়। যদি ব্যাটিংকারী দল প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়বার আরও পর্যাপ্ত রান তুললে ব্যাটিংকারী দ্বিতীয় দলের পক্ষে পর্যাপ্ত সময় থাকে না ও জয়ের কোনরূপ সম্ভাবনাই থাকে না। এর ফলে, ড্রয়ের সম্ভাবনা বেশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ব্যাটিংকারী দ্বিতীয় দলের উজ্জ্বীবনা শক্তি রহিত হয় ও মনোবল হারায় যে খেলায় কিছুই করার নেই। সামগ্রীকভাবে শেষে ব্যাট করার ফলে অসুবিধার মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। বাউন্সের দিক দিয়ে পিচের পরিবেশ ভিন্নতর হয় ও স্পিনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। একজন অধিনায়ক ফলো-অন প্রয়োগ না করে তার বোলারদেরকে দূর্বলতর পিচের সুবিধা লাভে বোলারদেরকে উদ্দীপনা যোগান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফলো-অন প্রয়োগ না করার বিষয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অনুশীলিত হচ্ছে। সাবেক ইংরেজ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রস বেশ কয়েকবার এ কৌশল অবলম্বন করে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা চালিয়ে যান। কিছু সফলতাও পেয়েছেন তিনি। লর্ডসে ২০০৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২১০ রানে পিছিয়ে থাকে। ফলো-অনে ফেলার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও ইংল্যান্ড পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামে ও ৫২২ রানের দূরূহ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। খেলায় সহজেই ইংল্যান্ড দল জয়লাভ করে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংও ফলো-অনের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। খেলার শেষদিককার নড়বড়ে পিচে শেন ওয়ার্নের বোলিংকে কাজে লাগিয়ে সফলতাও পান তারা।
ফলো-অনে না খেলানোর খেসারত
[সম্পাদনা]টেস্ট ক্রিকেট
[সম্পাদনা]- দক্ষিণ আফ্রিকা ব অস্ট্রেলিয়া, কিংসমিড, ১৯৫০
খেলার মাঝে একদিন বিরতিসহ চারদিনের টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জয়লাভ করে ৩১১ রান তুলে। অফ স্পিনার হিউ টেফিল্ড ৭/২৩ পেলে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৩৬ রানে এগিয়ে যায়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান দলনেতা ডাডলি নোর্স অস্ট্রেলিয়াকে ফলো-অনে না পাঠিয়ে বৃষ্টির পূর্বাভাষ পেয়ে দলকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে পাঠান। কিন্তু তারা ৯৯ রানে অল-আউট হয়ে যায়। তবে, নীল হার্ভের অপরাজিত ১৫১ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া ১২৩.৬ ওভার খেলে ৩৩৬ রান তুললে ৫ উইকেটে জয় পায়।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
[সম্পাদনা]- আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ - আফগানিস্তান ব কানাডা, শারজাহ, ২০১০
কানাডা টসে জয়ী হয়ে প্রথম ইনিংসে ৫৬৬ রান তুলে। জবাবে আফগানিস্তান ২৬৪ রানে অল-আউট হয়। ফলশ্রুতিতে কানাডা প্রথম ইনিংসে ৩০২ রানে এগিয়ে যায়। উইকেট-রক্ষক ও অধিনায়ক আশীষ বাগাই দ্বিতীয় ইনিংসে রিটায়ার্ড হার্ট হন দলের ৪০ ওভারে ১৯১/৪ তুলে ও ইনিংস ঘোষণা করেন। ৪৯৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় আফগান উইকেট-রক্ষক মোহাম্মাদ শেহজাদ অপরাজিত ২১৪ রান তুলে দলকে ৬ উইকেটের জয় এনে দেন।[৩]
ফলো-অন অবস্থায় জয়
[সম্পাদনা]যদিও ফলো-অন অবস্থায় দলের জয় আনা অসম্ভব কিছু নয়; তবুও এ প্রক্রিয়াটি খুব কমই ঘটে থাকে। এ জয় অর্জন হলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয় যা এর রেশ অনেক বছর ধরে চলতে থাকে। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাত্র তিনবার এ ঘটনাটি ঘটেছে ও প্রত্যেকবারই এর শিকারে পরিণত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল।
টেস্ট ক্রিকেট
[সম্পাদনা]- ১৮৯৪-৯৫ অ্যাশেজ সিরিজ
সিডনিতে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ৫৮৬ রানের বিশাল সংগ্রহ করে। সিড গ্রিগরি করেন ২০১ ও জর্জ গিফেন ১৬১। এরপর ইংল্যান্ডে ৩২৫ রানে অল-আউট হয়। চতুর্থ দিনে অস্ট্রেলিয়া ১১৩/২ তুলে ও সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু পূর্বরাতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। লক্ষ্যণীয় যে, ঐ যুগে খেলা শেষ হবার পর পিচ ঢাকা হতো না। পরদিন সকালে ইংল্যান্ডের স্লো লেফট-আর্ম বোলারদ্বয় - ববি পিল ও জনি ব্রিগস অস্ট্রেলিয়াকে ১৬৬ রানে অল-আউট করে দলকে নাটকীয়ভাবে ১০ রানের জয় এনে দেন ও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে ভূমিকা রাখেন।[৪]
- বোথামের টেস্ট - ইংল্যান্ড ব অস্ট্রেলিয়া, হেডিংলি, ১৯৮১
১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ান বোথাম সফরকারী অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে দূর্বলতর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ঐ সময় অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিছনে অবস্থান করছিল ও ডেনিস লিলি, টেরি অল্ডারম্যান ও জিওফ লসনের ন্যায় বিখ্যাত পেস আক্রমণ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। গ্রীষ্মের ছয়-টেস্টের অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে পরাজয় ও ড্র করার পর বোথাম অধিনায়কত্ব থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করেন।
হেডিংলিতে বোথামের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তৃতীয় টেস্টে মাইক ব্রিয়ারলি দলের দায়িত্ব নেন। শুরুটা তাদের বেশ মন্দাবস্থায় কাটে। অস্ট্রেলিয়া ৪০১ রান তুলে (জন ডাইসন ১০২, কিম হিউজ ৮৯; ইয়ান বোথাম ৬/৯৫)। ইংল্যান্ড ১৭৪ রান তুলে (ডেনিস লিলি ৪/৪৯, লসন ৩/৩২) ফলো-অনে পড়ে। ইনিংসের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বোথামের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান তোলা যা ১৩ খেলা পূর্বে অধিনায়ক থাকাবস্থায় সর্বশেষ করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি যখন মাঠে নামেন, তখন দলের সংগ্রহ ছিল ১০৫/৫। তখনও তারা ১২৬ রান পিছনে অবস্থান করছিল। জিওফ্রে বয়কট ও বব টেলর চলে গেলে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৫/৭। ৯২ রানে পিছনে থেকে দলটি ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় অবস্থান করছিল।
উভয় দলের প্রত্যেকের কাছেই খেলার গুরুত্ব হারিয়ে যায় ও পরাজয় নিশ্চিত বলে ধারণা করা হয়। ল্যাডব্রোকস হেডিংলি টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের পক্ষে ৫০০-১ বাজী রাখে। গ্রাহাম ডিলি ক্রিজে নামলে বোথাম তাকে বলেন, এখন থেকে চলো কিছুটা মজা করি। বোথাম নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের সহায়তায় ১৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন ও ইংল্যান্ডকে ১২৯ রানে এগিয়ে নিয়ে যান। পরদিন বব উইলিস ৮/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লে অস্ট্রেলিয়া ১১১ রানে গুটিয়ে যায়।[৫]
- ভারত ব অস্ট্রেলিয়া, ইডেন গার্ডেন্স, ২০০১
অস্ট্রেলিয়া তাদের পূর্বেকার ১৬ টেস্টে জয় পায়। তন্মধ্যে, দুই দলের মধ্যকার তিন-টেস্ট সিরিজের প্রথমটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৬] দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান তুলে ও ভারতকে ১৭১ রানে বেঁধে ফেলে। দলের পক্ষে কেবলমাত্র ভি. ভি. এস. লক্ষ্মণ (৫৯) ও রাহুল দ্রাবিড় (২৫) দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছেছিলেন। ভারতের পক্ষে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল হরভজন সিংয়ের ৭/১২৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়া। তন্মধ্যে তিনি রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও শেন ওয়ার্নকে আউট করে হ্যাট্রিক সম্পন্ন করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া তাদেরকে জোরপূর্বক ফলো-অনে প্রেরণ করে।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হবার অল্প কিছুক্ষণ পূর্বে লক্ষ্মণ ক্রিজে আসেন। তিনি ২৮১ রান তুলে খেলাসহ সিরিজের গতিধারা পরিবর্তনে অগ্রসর হন। তার এ সংগ্রহটি তৎকালীন ভারতীয় টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড ছিল। দ্রাবিড়ের সাথে বিধ্বংসী জুটি গড়েন। দ্রাবিড় করেন ১৮০ রান। এ দুজন চতুর্থ দিনের পুরোটা সময় পাড় করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫৭/৭ তুলে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতির অল্প কিছু পূর্বে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ও ৩৮৩ রানে এগিয়ে যায়। অপর্যাপ্ত সময় থাকায় অস্ট্রেলিয়ার নিদেনপক্ষে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। চাবিরতি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬১/৩ ও সম্ভাব্য ফলাফল ছিল ড্র। তারপর অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে ৩১ বলের ব্যবধানে ৮ রান তুলতে অস্ট্রেলিয়া পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে। একই ওভারে হরভজন প্রথম দুই উইকেট লাভের পর শচীন তেন্ডুলকর দ্রুততার সাথে তিন উইকেট তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়া ২১২ রানে অল-আউট হলে ভারত খেলায় জয় পায়। হরভজনের অসাধারণ বোলিং পরিসংখ্যান ৬/৭৩ লাভ ও প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট লাভ স্বত্ত্বেও লক্ষ্মণ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।[৭] ভারতের ১৭১ রানে বিজয়টি ফলো-অনে পরার পরও তিনটি টেস্ট জয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিল। টেস্টের ইতিহাসে একমাত্র ঘটনা হিসেবে ফলো-অনের পরও ইনিংস ঘোষণা করে জয় পায়। ৩য় টেস্ট জয়ের ফলে সিরিজও জয় পায় তারা। উভয় ইনিংসে লক্ষ্মণ অর্ধ-শতক পান ও হরভজন ৩২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Law 14 – The follow-on"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ Brearley, M. The Art of Captaincy. Macmillan, 1988, p.212
- ↑ http://www.cricketarchive.co.uk/Archive/Scorecards/266/266105.html
- ↑ "1st TEST: Australia v England at Sydney Cricket Ground, 14–20 Dec 1894"। Cricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৩।
- ↑ "3rd TEST: England v Australia at Leeds, 16–21 Jul 1981"। Uk.cricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৩।
- ↑ "Test No. 1531 – Border-Gavaskar Trophy, 1st Test, 2000/01, India v Australia"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- ↑ "Test No. 1535 – Border-Gavaskar Trophy, 2nd Test, 2000/01, India v Australia"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- ↑ "Test No. 1539 – Border-Gavaskar Trophy, 3rd Test, 2000/01, India v Australia"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১।
গ্রন্থপঞ্জী
[সম্পাদনা]- Birley, Derek (১৯৯৯)। A Social History of English Cricket। London: Aurum Press। আইএসবিএন 1-85410-941-3।
- Brodribb, Gerald (১৯৯৫)। Next Man In: A Survey of Cricket Laws and Customs। London: Souvenir Press। আইএসবিএন 0-285-63294-9।