Nothing Special   »   [go: up one dir, main page]

বিষয়বস্তুতে চলুন

সূরা আদিয়াত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আল-আদিয়াত থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আল-আদিয়াত
শ্রেণীমাক্কী সূরা
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১০০
আয়াতের সংখ্যা১১
পারার ক্রম৩০
রুকুর সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা যিলযাল
পরবর্তী সূরা →সূরা ক্বারিয়াহ
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আল-আদিয়াত (আরবি: سورة العاديات) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০০ তম সূরা, এর আয়াতের সংখ্যা ১১টি, এর রূকুর সংখ্যা ১টি এবং ৩০ পারা। আ'দিয়াত সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল-আদিয়াত এর বাংলা অর্থ হল অভিযানকারী।

অবতীর্ণ হওয়ার সময় ও স্থান

[সম্পাদনা]

এই সূরাটির মক্কী বা মাদানী হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, জাবের, হাসান বসরী, ইকরামা ও আতা বলেন, এটি মক্কী সূরা। আনাস ইবনে মালিক ও কাতাদাহ একে মাদানী সূরা বলেন। অন্যদিকে ইবনে আব্বাস থেকে দুই ধরনের মত উদ্ধৃত হয়েছে। তাঁর একটি মত হচ্ছে এটি মক্কী সূরা এবং অন্য একটি বক্তব্যে তিনি একে মাদানী সূরা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সূরার বক্তব্য ও বর্ণনাভঙ্গী পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, এটি কেবল মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী যুগের প্রথম দিকে নাযিল হয়।

শানে নুযূল

[সম্পাদনা]

সুরা আদিয়াত নাজিলের পটভূমি হল হিজরি অষ্টম সনের একটি যুদ্ধ। মুসলমানদের ওপর অতর্কিতে হামলার উদ্দেশ্যে আরবের ইয়াবেস উপত্যকার মুশরিকরা মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকাতে জড়ো হলে হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এ সংবাদ পেয়ে আবু বকরের নেতৃত্বে তাদের প্রতিহত করতে এক সেনাদল পাঠান। কিন্তু তারা ছিল খুবই দুর্ধর্ষ। ফলে আবু বকর ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং বহু মুসলমানও নিহত হয়। দ্বিতীয় দিন উমর ইবনে খাত্তাবের নেতৃত্বে পাঠানো সেনাদলও একইভাবে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় দিন আমর ইবনে আস বলেন, ‘আমাকে যদি নেতা নিযুক্ত করা হয় তবে আমি কৌশলে তাদেরকে হারাব।’ তাকেও পাঠানো হল। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয় আবু বকর ও উমর কেবল আলোচনার মাধ্যমে ওই শত্রুদের বশে আনার চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। যাই হোক অবশেষে মুহাম্মাদ(সঃ) আলীকে নেতা নিযুক্ত করলেন এবং তিনি তাঁকে মসজিদে আহযাব অবধি পৌঁছে দিয়ে বিদায় নিলেন। আলী সেনাদলকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলেন এবং রাত থাকতেই তাদের কাছে পৌঁছে গেলেন এবং আক্রমণ করে তাদের বহু লোককে হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টকে শৃঙ্খলিত করে নিয়ে আসলেন। এ কারণে ঐ যুদ্ধকে ‘বাতুল আখদাল’ বলা হয়।

এদিকে আলীর নেতৃত্বে বিজয়ীরা মদীনা পৌঁছানোর পূর্বেই সুরা আদিয়াত নাজিল হয়। মুহাম্মাদ(সঃ) ফজরের নামাজে এই নতুন সুরা পড়লে সাহাবিরা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আলীর নেতৃত্বাধীন সেনাদের বিজয়ের সুসংবাদ শোনান। মুহাম্মাদ প্রফুল্ল চিত্তে যুদ্ধবিজয়ীদের অভ্যর্থনা জানাতে বেরিয়ে আসেন। আর যখন তাঁর ওপর আলীর দৃষ্টি পড়ল সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন। তখন মুহাম্মাদ (সঃ) বললেন, ‘হে আলী! যদি আমার উম্মতের বিপথগামিতার আশঙ্কা না থাকত তবে তোমার সম্পর্কে আমি সেই কথা বলতাম যারপর মানুষ তোমার পদধূলিকে রোগ-মুক্তির জন্য নিয়ে যেত।’

বিষয়বস্তুর বিবরণ

[সম্পাদনা]

সুরা আদিয়াতের প্রথম দুই বাক্যের শপথ ইসলাম ধর্মে জিহাদের গুরুত্বই তুলে ধরছে। অবিশ্বাসী বা কাফের ও জালেমদের হামলা বা উৎপাতের মোকাবেলায় প্রতিরোধ ও সংগ্রামকে খুবই গুরুত্ব দেয় ইসলাম। ইসলাম ধর্ম অন্য জাতিগুলোর ওপর আগ্রাসন চালানোর ও অন্যায় যুদ্ধ বা সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেয় না, কিন্তু ইসলাম ধর্মকে রক্ষা এবং মুসলমানদের জান-মাল, সম্মান ও দেশ রক্ষা করাকে অপরিহার্য পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করে। তাই মহান আল্লাহ মুজাহিদদের ঘোড়ার নিঃশ্বাসকেও গুরুত্ব দিয়ে জিহাদের ময়দানে ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির শপথ নিয়েছেন সুরা আদিয়াতে। জিহাদের মর্যাদা তুলে ধরতে পথের পাথরের সঙ্গে 'ঘোড়ার ক্ষুরাঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরণকারীদের' ও শপথ নিয়েছেন মহান আল্লাহ। সুরা আদিয়াতে এর পরের বাক্যে আল্লাহ বলেছেন, এবং শপথ সেই ঘোড়াগুলোর যখন তারা যুদ্ধের ময়দানে ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে, এবং এরপর যারা শত্রুদের ভেতরে ঢুকে পড়ে।–এখানে আলীর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কথা বলা হয়েছে। তারা খুব দ্রুত শত্রুর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল এবং সেই অভিযানে চারদিকে ধূলোবালি ছড়িয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎগতির সেই হামলায় হতভম্ব শত্রুসেনারা বিধ্বস্ত হয়। খুব দ্রুত প্রস্তুতি ও তীব্র গতিতে হামলা যুদ্ধের ময়দানে লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক।

সুরা আদিয়াতে আল্লাহর নেয়ামতগুলোর ব্যাপারে মানুষের অকৃতজ্ঞতা ও কার্পণ্যের কথা বলা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই যখন বিপদ বা কঠিন অবস্থার শিকার হয় তখন আল্লাহকে খুব আন্তরিক চিত্তে স্মরণ করে। আর বিপদ বা কঠিন অবস্থা যখন কেটে যায় তখন তারা আল্লাহকে ভুলে যায় বা আল্লাহ সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে। যাদের হৃদয়ে মহান আল্লাহর পরিচয়ের আলো ও শিক্ষার প্রভাব নেই তারা খুব দ্রুত খোদাবিমুখ প্রবৃত্তির কাছে নতজানু হয়। এরা হয়ে পড়ে অকৃতজ্ঞ ও কৃপণ। এ বিষয়টা তারা বুঝতেও পারে এবং স্বীকারও করে। আর যদি স্বীকার করতে নাও চায় তাহলেও তা নিজ বিবেক ও আল্লাহর কাছে গোপন করার সাধ্য তো তাদের নেই। অকৃতজ্ঞতা হচ্ছে মানুষের বহু সমস্যা ও সংকটের মূল এবং এ মন্দ স্বভাবের পরিণতিতে মানুষ পরকালীন শাস্তি ভোগ করে। অর্থ ও সম্পদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অনুরাগের কারণে মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের কথা ভুলে গিয়ে অকৃতজ্ঞ ও কৃপণ হয়।

সুরা আদিয়াতের ৮ নম্বর আয়াতে ধন-সম্পদকে 'আল-খাইর' বলা হয়েছে। এর অর্থ সম্পদ সত্তাগতভাবে মন্দ নয় বরং যথাযোগ্য ব্যবহারের সুবাদে কল্যাণের মাধ্যমও হতে পারে। কিন্তু সম্পদের প্রতি লোভ বা মোহটাই অকল্যাণের উৎস যা মানুষকে করে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রীক।

সুরা আদিয়াতের নবম বাক্যে বলা হচ্ছে অকৃতজ্ঞ ও কৃপণরা কি জানে না যে কিয়ামতে সবাইকে ওঠানো হবে কবর থেকে এবং তাদের মনে যা যা ছিল সেদিন সেসবই প্রকাশ করা হবে? সেদিন মানুষ তাদের চিন্তা-বিশ্বাস ও তৎপরতার আলোকে প্রতিফল পাবে। এভাবে আল্লাহ যে মানুষের প্রকাশ্য ও গোপন সব কিছুই জানেন ও জানতেন তা সেদিন প্রকাশ হবে। তাই এ সতর্কবাণীর আলোকে মানুষের উচিত পাপ এড়িয়ে চলা।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]